অশোকষষ্ঠী বা বাসন্তীদুর্গাপুজো হয় চৈত্রমাসের শুক্লাতিথিতে। মহাদেবের নীলের পুজোর দিনটা বরাদ্দ চড়ক বা গাজনের দিনক্ষণ অনুযায়ী, বর্ষশেষের সংক্রান্তির আগের দিনে। প্রতিবছর এই নিয়ে দুগ্গার সঙ্গে শিবের বেশ ঠান্ডা লড়াই চলে। তা এবার সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে বাসন্তী-অশোকষষ্ঠী আর নীল একদিনে পড়েছে। শিবের ফন্দী আর কি দুগ্গার জানা নেই? দুগ্গা একটু বাপেরবাড়ি আসতে চান নিরিবিলিতে কিন্তু এবার সেই গাঁটছড়া বেঁধে নেশাখোরটা সঙ্গী হল।
আসার পথে দুগ্গা বলেছিল একবার, এবার ভোটের হাওয়া গরম, বোশেখ না পড়তেই হাওয়াবাতাস গরম। তুমি চুল-দাড়ি-জটা-গোঁফ কেটে চলো। শিব বলল, আমি মেয়েছেলের কথায় কান দিই না।
দুগ্গা বলল, ক'দিন আগেই তো ঠান্ডায় ঠান্ডায় শিবরাত্তিরে কত ক'দিন আগেই তো মহা ধূমধাম করে কত্ত পুজো পেলে । ফাগুনদিনের মাগ্যির বেলের পানা, তরমুজ, ফুটি খেয়ে পথ্যি করলে। সিদ্ধি-মধু-ঘিয়ের ফেসপ্যাক নিলে । ডাবের জলে মুখ আঁচালে । ঠান্ডার পর নতুন গরমে টক দৈয়ের ঘোল খেয়ে ব্যোম্ ব্যোম্ করে ত্রিভুবন শান্তি কল্লে । মাথা ঠান্ডা তো তোমার গুরু! আবার নীলষষ্ঠী ? ষষ্ঠী তো এতদিন জানতাম একবগ্গা মেয়েদের সম্পত্তি। এবার সেখানেও ভাগ বসালে তো আমাদের ব্র্যান্ড ডাইলুশান হয়।
শিব বলল, নিজের আত্মতুষ্টিতে বিভোর তুমি। জানবে কি করে প্রজারঞ্জনের মাহাত্ম্য?
আবার ষষ্ঠীর পেছনে নীল জোড়া কেন বাপু? কই আমরা তো লাল,সবুজ, হলুদ ষষ্ঠীর দোহাই দিই না মানুষকে।
পাশ থেকে সাওকড়ি মেরে নন্দী বলল, মা ঠাকরুণ তো ঠিকই বলেচে বাবা।
নীলষষ্ঠী নীল কেন ? লাল বা সবুজ নয় কেন?
নীল কথাটি নীলকন্ঠ মহাদেবের সাথে সাযুজ্য রেখে... এতদিন আমার কাছে আচিস এটাও জানিস নে? মহাবাবা বলেন । সেই যে সেই সমুদ্রমন্থনের সময় আমি দুনিয়ার সব বিষ আমার কন্ঠে ধারণ করেছিলাম । তাই তো সকলে আমাকে নীলকন্ঠ বলে ডাকে রে ।
তার সঙ্গে ষষ্ঠী জুড়লো কে বাবা ? নন্দী বললে
তাহলে শোন্ বলি:
এক বামুন আর বামনীর পাঁচছেলে আর দুটি মেয়ে । ( ফ্যামিলি প্ল্যানিং তো আর ছিলনা সে সময়ে )তারা খুব পুজোআচ্চা করত । কিন্তু এত পুজো, বারব্রত করেও তাদের সব ছেলেমেয়েগুলো একে একে মরে গেল । তখন বামনীর ঠাকুরদেবতায় বিশ্বাস চলে গেল । তাদের আর সেই জায়গায় থাকতেও ভালো লাগল না । বামুন-বামনী ঠিক করল সব ছেড়েছুড়ে তারা মনের দুঃখে কাশীবাসী হল । দশাশ্বমেধ ঘাটে স্নান করে অন্নপূর্ণার পুজো করে মণিকর্ণিকার ঘাটে বসে আছে , এমন সময় মা-ষষ্ঠী বুড়ি এক বামনীর বেশে এসে বললে " কি ভাবছ গো মা?" বামনী বললে " আমার সব ছেলেমেয়েদের হারিয়েছি । এত পুজোআচ্চা সব বিফলে গেল আমাদের । সব অদৃষ্ট। ঠাকুর দেবতা বলে কিছ্ছু নেই । "
ষষ্ঠীবুড়ি বললেন " বারব্রত নিষ্ফল হয়না মা, ধর্মকর্ম যাই কর ঈশ্বরে বিশ্বাস চাই । তুমি মা-ষষ্ঠীকে মানো? তাঁর পুজো করেছ কখনো? তিনি সন্তানদের পালন করেন । বামনী বললে " আমি এযাবতকাল সব ষষ্ঠী করে আসছি কিন্তু তবুও আমার ছেলেরা রইল না ।
ষষ্ঠীবুড়ি বললেন্" তুমি নীলষষ্ঠীর পুজো করেছ কখনো? চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন উপোস করে শিবের পুজো করবে । শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে জল খাবে । সন্তান্দের মঙ্গলকামনা করবে"
বামনী সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে পুনরায় মাতৃত্ব লাভ করলে । নন্দী সব শুনে বললে" বাবা, এ তো তবে তোমার নিজের ব্র্যান্ড ক্রিয়েট করলে তুমি । আর সবষষ্ঠীর পুজোয়তো মাষষ্ঠীর পাল্লা ভারী হয়ে যাচ্ছিল তাতে যদি তোমার নামডাকে ভাটা পড়ে তাই বুঝি এমনটি কল্লে তুমি?"মহাবাবা বললেন " দেখ নন্দী, এখন যা যুগ এয়েচে তাতে নিজের ব্র্যান্ড যে মূল্যেই হোক ক্রিয়েট করতে হবে । নয়ত তুই স্থান পাবিনা জগতে , যা কম্পিটিটিভ মার্কেট এয়েচে! লাখলাখ দেবদেবীর ভিড়ে মহাদেবকে কেউ আর মানবেনা ।
আর এবার সেজন্যেই একসঙ্গে এসেচি আমরা। বাসন্তী-অশোক ষষ্ঠীও থাক। নীলষষ্ঠীও থাক। মানুষ জানুক রসায়নের জারণ-বিজারণের মত, পদার্থবিদ্যার স্থিতি-গতির মত শিব-দুগ্গার স্মরণ-মনন যুগপত ঘটে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন