সহেলী:
শহরের প্রাণকেন্দ্রে, তিনতারা হোটেলে,
আলো-আঁধারের  ডিস্কোথেকে,  
এসে শোনাই গান রঙিন পোশাকে,  
আজও  এসেছি.. 
কিন্তু কোনোদিন এমন হয়না, 
ভুলে  থাকি গানে, 
লাস্যময়ি হাস্যময়ী শ্রীময়ী  রূপে...
আমি এখন মিস্ সহেলী, নিইনা  পদবী,  
জানি না তোর নাম আমি, 
কৃষ্ণা,  কেয়া কিম্বা করবী।  
কিন্তু কোথায় যেন দেখেছি  তোকে?
শুধাই নিজের মনে নিজেকে.. 
সমালী:
কেন  খালি চেয়ে থাকো? 
কলেজে পড়ি সেকেন্ড ইয়ার, 
নাচতে  পারিনাকো! 
তোমার গলা চেনা নয়, 
তবু  গায়ের গন্ধ কেন চেনা মনে হয়!
সহেলী:
আজ  কেন আমার নাচের তাল কেটে যায়...  
বারবার কেন  স্বররূদ্ধ হয়ে যায়, 
চেনাগানের কলিও অকারণে হরিয়ে  যায় অবচেতনে 
আমি খালি চেয়ে রই তোর  মুখপানে... 
কি নাম তোমার? থাকোই বা  কোথায়? 
আছো কেন একা বসে এই সন্ধ্যায়?
সমালী:
আমি  সমালী, মায়ের দেওয়া নাম কমলিকা, 
বন্ধুরা আসবে  এখুনি, ততক্ষণ বসে একা,  
জন্মদিন আমার আজ ..
তুমি  কি গান গেয়ে মাতাবে আজকের সাঁঝ? 
সহেলী:
সোমত্ত  মেয়ে তুমি একা কেন এলে?  
সন্ধ্যাবেলা শহরের এই  হোটেলে...
সমালী:
আমি  তো অনাহুতা, রবাহুতা, অবাঞ্ছিতার দলে  
বাঁচিয়ে  রাখার ঋণে আমি চিরঋণি গৌতমীমার কাছে,
নিয়েছে কোলে তুলে  অভগিনী এই শকুন্তলাকে,  
তবুও পাইনি সুখের খোঁজ,  দেখিনি সৌভাগ্যের মুখ!  
ছিল যে জন্মলগনে আস্তাকুঁড়ের   অভিশাপ!
সহেলী:
কেন  তুমি দাও না ধরা মোরে, 
কেন রাখো? না বলা কথা বুকের  মাঝে ধরে ?
সমালী:
বাবার  ব্যবসা জানি, তবে মা যে নয় নিজের আমার, 
পাড়ার  লোক বলে তাই ; 
কোনো এক শীতের ভোরে, বাবা  এনেছিল আমায় বাড়ি, 
চট জড়ানো ন্যাকড়া গায়ে, ঠিক  যেমন করে পড়ে থাকে 
নেংটি ইঁদুর, কুকুর ছানা  অবহেলায় পথের ধারে...
গাড়ি চেপে এলো বাড়ি, এলো সেই  মেয়ে, 
ফুটলো কমল কপাল জোরে, 
কমলিকা  নাম দিল সে,  
বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে, যত্নে,  সুখে মানুষ করে... 
স্কুল পাঠিয়ে বড় করে, 
কিন্তু  কেন জানি কৃত্তিমতার স্পর্শ অনুভূত হয় সেই বাত্সল্যে?  
কেন  জানি সম্পর্কের গভীরতায় প্রবেশ করতে পারিনা.. 
তোমায়  কেন এত কথা বলে নষ্ট করি তোমার সময়, 
চেনা চেনা মুখ,  ডাকে কাছে আয়.. 
বলো না কে তুমি? 
বন্ধুরা  এসে পড়লো বলে...
সহেলী:
আজ  আর গাইব না গান আমি, 
তোর ডান গালের ঐ কালো জড়ুল, 
বুঝিয়েছে  মা তুই যে আমার, 
আমার প্রাণের প্রথম প্রেমের  তুই যে ফসল, 
যৌবনেরই রঙিন জলে, ভেসেছিলেম  দুজন মিলে, 
ভাবিনি যে ফিরে পাবো, আবার  দেব ভুলের মাশুল !  
সমালী:
বেশ  তো, তবে চলো আমার সাথে, 
ভুলের মাশুল দিয়োখনে সেথায় আজ  রাতে, 
সহেলী:
না  সে হয়না সমালী, না কমলিকা, 
কেউ মানবে না আজ আমার কথা  আমি যে আজ একা ! 
কেনই বা করবি ক্ষমা ?
পারেনি  যে মা দিতে তোরে কোল একদিন, 
বাধেনি তার একটুকুও ছুঁড়ে  ফেলে দিতে, 
সেই কঠিন পথের ধূলার পরে, 
নরম  শিশুর কান্না ঝরে!
সমালী:
যদি  আমি বলি তাদের, যদি আমি সাক্ষী দিই,  
মায়ের সেই মেয়ে  হয়ে যদি পরিচয় দিই, 
যদি একবার ডাকি মা বলে.. 
ভুলে  যাই সব, ভুলে যাও সব, 
বাঁচি মোরা দুজনে আবার নতুন  করে । 
"সহেলী-সমালী-সমাচার" এই কাব্যনাট্যটি তিনসুকিয়া কলেজ অসম থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা "প্রজ্ঞান" ২০১০ মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে
"সহেলী-সমালী-সমাচার" এই কাব্যনাট্যটি তিনসুকিয়া কলেজ অসম থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা "প্রজ্ঞান" ২০১০ মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে
 
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন