১৩ ফেব, ২০১৬

জয় শীতলষষ্ঠী! বসন্ত এসে গেছে.....

 তোলা থাক শিলনোড়া আজ! জ্বলবেনা গ্যাস-উনুন।  শিলকে হলুদ জলে স্নান করিয়ে তেল হলুদ ছোপানো ঠান্ডা কাপড় পরিয়ে জোড়া শিম, জোড়া মটরশুঁটি রেখে তার কোলে রাখো তার সন্তান সম নোড়াটি। কাল সকালে তার এই ঠান্ডা জল থেকে মুক্তি।

শীতকাল আমাদের কেমন যেন একটু অলস করে দেয়। বিশেষতঃ বৃদ্ধরা যেন এইসময় আরো জরাগ্রস্ত, কুঁড়ে এবং ঘরকুনো হয়ে পড়েন। শীতের দাপট এখন আর তেমন দেখিনা কিন্তু একসময় মাঘে শীত পড়ত। তাই বুঝি "মাঘের শীত বাঘের গায়".. এই প্রবাদটি প্রচলিত।  মাঘের শেষে বসন্তপঞ্চমীতে গোটাষষ্ঠী বা শীতলষষ্ঠীর ব্রতকথা পড়তে পড়তে মনে হল সেইকথা। কাহিনীতে সংসারের কর্ত্রী এক বৃদ্ধা মাঘমসেও গরম ভাত খেতে চান আর উষ্ণজলে স্নান করতে চান। তার ফলে তাঁর বিপদ আসে।  আর ধর্মভীরু মানুষকে এই কাহিনী শুনিয়ে বলতে হয়, বসন্ত এসে গেছে, আর শীত নয়। গরম জামাকাপড় বাক্সে ভরো। ঠান্ডা জলে স্নান করো।  শরীর ঠান্ডা রাখো নয়ত রোগভোগ হবে। 

এতদিন শীতের দাপটে মানুষের শুধু গরম খাব, গরম পরব, লেপ, বালাপোষ রোদ খাওয়াব, একটু আলসেমিকে প্রশ্রয় দিয়ে আরো শীতকাতুরে হয়ে পড়ব....এই মনোভাবটির বুঝি বর্জন হল এইবার। কারণ বসন্ত এসে গেছে। এবার শীতকে বিদায় জানাতেই হবে। এখন গরম খেলে, গরম পরলে রোগের প্রকোপ বাড়বেই। তাই ঠান্ডা খাও, ঠান্ডা পরো, স্বাগত জানাও নাতিশীতোষ্ণ পরিমন্ডলকে।  তাই বুঝি শীতলষষ্ঠী।  
বাংলাদেশের সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা মাটির বুকে শক্তির আরাধ্যারূপে পূজিতা দেবী শীতলা, ষষ্ঠী, সকলেই মা দুর্গার অংশ বিশেষ। শাস্ত্রে শরত ও বসন্ত এই দুই ঋতুকে বলা হয় "যমদংষ্ট্রা" অর্থাত এই দুই ঋতুতে মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধি ভোগ করে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। শরত এবং বসন্ত এই দুই ঋতুর আগমনেই ভারতবর্ষের মত গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ঋতু পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। ফলে রোগের প্রকোপ বাড়ে। দুর্গা দুর্গতিনাশিনী তাই আবির্ভূতা হন এই দুই সময়ে। ঈশ্বরে বিশ্বাস আর সেই বিশ্বাসের ভেলায় চেপে সংসারসমুদ্রের ঝড় সামলাই আমরাও । অযথা তর্কে না গিয়ে অনেকেই সংসারের বিপদমোচনের জন্য এই শীতলষষ্ঠী ব্রত করে থাকি ।  আর তাই

শ্রীপঞ্চমী থাকিতেই গোটাসিদ্ধ করিও
জোড়া জোড়া ষড় আনাজ গোটামুগে ফেলিও।
গোটা শুকনোলংকা, তাও দিও জোড়ায়
লবণ, সরিষার তেল ঢালিও শেষ ফোটায়।
আতপচালের পান্তা ভাতে, জল ঢালিও রাতে
টোপাকুলের অম্বল রাঁধিও, সজনেফুল সাথে।
টক দৈ খাইও শেষে, ঠান্ডা, ঠান্ডা সবই
শীতলষষ্ঠী পালন হোক, এই তো আমরা চাহি।


৫ ফেব, ২০১৬

শীতকালীন জার্নাল

 (১)  
কেমন যেন হুড়মুড়িয়ে বড়দিনের সকাল 
কেমন যেন ওম জড়ানো মিষ্টি রোদের সকাল 
তবুও যেন একটা বড় মনের বড়ই আকাল !  

কেমন যেন ঠান্ডা হাওয়ায় কমলা খোসার নূপুর  
কেমন যেন কুয়াশাতে অকাল টাপুরটুপুর 
তবুও যেন মনখারাপ আর বছর শেষের দুপুর ! 
কেমন যেন  শীতের বিকেল উষ্ণ প্রদোষ আলো । 

কেমন যেন ঈশাণ কোণে হালকা মেঘের ছোঁয়া
 আজ বিকেলের কয়েক পশলা  রেশমী উলের রোঁয়া । 
আমি যেন বদলে গেছি হয়ত বা সেই ভুল
আমি যেন আমিই আছি কিম্বা সর্ষেফুল । 
আমি যেন রাতদুপুরে তোমার কথা ভাবি 
সময় হলে খুঁজে দিও স্বপ্নলোকের চাবি । 


 (২)
কেকমাস আজ মধুমাস, ক্রিসমাস পোষমাসে
একাকার হল হাড়মাস, শীতমাস সব্বোনেশে !
বাকী তিনমাস পর পচামাস তাই বাঁচো ভাই বেশ কশে
আজ ক্রিসমাস, ঝোলাগুড় খাস আর কেক খাস বসে বসে ।


(৩) 
 উলটে দ্যাখো শীতকে। পালটে গেছে কলকাতার শীত । মুঠোমুঠো রোদের কণায় একভর্তি ব্যালকনি । রোদের উঠোনে আরাম চেয়ারে হেলান দিয়ে আমি । গায়ে ওষ জড়ানো পশমিনা । পায়ে মোজা । ব্যালকনির সামনের ফুটপাথে সারেসারে পথশিশু । আদুড় গা কারো। কারো সোয়েটারের হাত ছেঁড়া । নাক দিয়ে দুরন্ত গতিতে শ্লেষ্মা । ভ্রুক্ষেপ নেই কারো । খেলে বেড়াচ্ছে । রাত হলে ঘরে গিয়ে খাবে দুপুরের জলঢালা ভাত দুমুঠো আর সাথে পাড়ার দোকানের গরম ফুলুরি আধখানা হয়ত । কপালে থাকলে এককুটি চারামাছ ।
আমাদের শিশু এসব বোঝেনা । তার জীবন জুড়ে " লাইফ অফ পাই" অথবা ডোমিনোস এর কুপন কিম্বা বাসকিন রবিনস এর জাগলিং ।
"কারো পোষমাস কারো সর্বনাশ" !!!

(৪)  
"মাঘের শীত বাঘের গায়"..... তো কি? শীতও চলে যাবে । মাঘের রোদের ওম্‌ জড়িয়ে রাজকীয় কায়দায় বাঘ চলে যাবে জঙ্গলের মধ্যে । বেচারা বাঘ! বোঝেওনা সে । নিছক শিকারের খোঁজে বেরোবে সে । নিজের জন্যে আর বাচ্চাটার জন্যে । জানেনাতো নরসিংহেরা ওত পেতে থাকে তার জন্য । তাদের শীত নেই গ্রীষ্ম নেই । তাপ-উত্তাপ কিছুই নেই । মাঘ গিয়ে ফাগুন আসবে ।
বাঘের রোদ পোহানোর দিনের শেষ আর কাগজ খুলে আমরা দেখে যাব সেই নিরীহ বাঘকে মারার নাটকীয় খবর ।
এমনি করেই চলবে আমাদের জীবন । নৃশংসভাবে, নোংরাভাবে, নারকীয় ভাবে......

 (৫) 
শিকেয় তোলা থাক ক'দিনের ঘুমপাড়ানির গান, রেওয়াজের সরগম চিলেকোঠার মাচায়।  আপাততঃ কবিতার খুচরো পঙতি আটকে থাকুক কাপড় মেলার তারে । এলোমেলো ভাবনার গদ্যগুলো ঝরে যাক নিজের মত ড্র‌ইংরুমের দেওয়ালের পুরোনো নোনা ধরা বালিগুলোর সাথে । তোমাদের হাসিগুলো নিশ্চিন্তে দিনকয়েক ঘুমিয়ে পড়ুক কবিতার ওষুধ খেয়ে । আমিও পথ হয়ে এঁকেবেঁকে আসছি তোমাদের কাছে, সেই  ফুরিয়ে যাওয়া ডাল-ভাতের আমি, সেই ধোপা-নাপিতের হিসেবের আমি, সেই না বলা অল্পের আমি হয়ে, মুঠোফোনের রিংটোন হয়ে.....